কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর উপর থাকা বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে

মোঃ রেজাউল ইসলাম প্রকাশিত: ১৯ জুন , ২০২৫ ১৪:১৪ আপডেট: ১৯ জুন , ২০২৫ ১৪:১৪ পিএম
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর উপর থাকা বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর উপর থাকা বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই পাড়ের হাজারও মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলেও বুক সমান পানি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া, ঝুঁকি নিয়ে সাঁতরিয়ে পারাপার হচ্ছেন শিশু-কিশোররা। প্রায় এক মাস যাবৎ এমন অবস্থায় যাতায়াত চলছে হাজারও মানুষের। যার ফলে যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় নবিউলের ঘাট বা আমিন মেম্বারের ঘাট নামে পরিচিত এলাকায় বাণিদাহ নদী পারাপারে নির্মাণ করা হয় ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো। প্রতিদিন শতশত মানুষ পারাপার হতো এ সাঁকো দিয়ে। কিন্তু এক মাস আগে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফিট ভেঙে যায় সাঁকোটি। তারপর থেকে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দারা জানায়, আগে বারোমাসিয়া নদীপাড়ের মানুষরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে পারাপার হতেন। ওই এলাকায় প্রথমে করিমের ঘাট পরে নবিউলের এবং সবশেষ আমিন মেম্বারের ঘাট হিসেবে পরিচিত ছিল। ঘাটগুলো ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ঘাটের নৌকায় পারাপার হতো মানুষজন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বারোমাসিয়া নদী ছোট হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে হাটু পানিতে চলে আসে নদীর পানি। ফলে দু’পাড়ের বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে তা দিয়ে চলাচল শুরু করেন। স্থানীয়রা আরও জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে ওই পথে সাঁকো ব্যবহার করছেন তারা। তবে বর্ষাকাল আসলে পানি বেড়ে নড়বড়ে হয়ে যায়। তাই বর্ষার শুরুতে সাঁকো সংস্কার করেন তারা। এবারও বাঁশের সাঁকোটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু মাসখানেক আগে হঠাৎ করে নদীতে পানি বেড়ে কচুরিপানা জমে তীব্র স্রোত তৈরি হয়ে নড়েবড়ে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। ফলে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী, চরগোরকমন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, নাওডাঙ্গা ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকবাজার ও পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট ইউনিয়নের চরখারুয়া এবং খারুয়াসহ ৮ গ্রামের হাজারও মানুষ এখন নদী পারাপারে চরম বিপাকে পড়েছেন। কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার তাহের আলী জানান, দুঃখের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ব্যাগে নতুন কাপড় নিয়ে বের হই। ভিজে এক বুক পানি ভেঙে পার হয়ে কাপড় বদল করে হাটে যেতে হয়। পাশের ঝাউকুটি এলাকার নুর ইসলাম জানান, প্রায় এক মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ভাঙা সাঁকোটি মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিদিন বাইসাইকেল কাঁধে নিয়ে বারোমাসিয়া নদীর পারাপার হতে হচ্ছে। একই এলাকার মর্জিনা বেগম ও জাহানারা বেগম জানান, তারা নদীপাড়ের চর থেকে ভুট্টা গাছ জ্বালানি হিসেবে আনেন। কিন্তু সাঁকো না থাকায় মাথায় নিয়ে ভিজে আসতে হয়। অনেক সময় শুকনো গাছ ভিজে গেলে আবারও শুকাতে হয়। কয়েকটি শিশু কিশোর জানায়, পানি বাড়ায় স্কুলে যান না তারা। পার হতে হলে সাঁতার দিয়ে যেতে হয়। চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, খারুয়া এলাকার মাসুদ রানা ও ঝাউকুটি এলাকার শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান জানায়, এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ। মাঝে মধ্যে সাঁতরিয়ে নদী ওপাড়ে যাই। বই খাতা নিয়ে তো সাঁতার দেয়া যাবে না। সাঁকো না হলে আমরা স্কুলে যেতে পারবো না। দ্রুত সাঁকোটি মেরামত করা দরকার। কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুল হক জানান, এবার আগে ভাগে কয়দিন বৃষ্টি ছিল। ফলে নদীর পানি বাড়ে। খুব স্রোতও হয়। স্রোতে ভেঙে যায়। আমরাদের দাবি দ্রুত সাকোটি মেরামত করা হো নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, দু'পাড়ের হাজার হাজার মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে পারাপার হতেন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে ছেলে-মেয়েরা পার হতে পারছেনা। স্কুল-কলেজ যেতে পারছে না। কিন্তু পানি বেড়ে নদীর প্রস্থ বেড়ে যাওয়ায় অনেক বড় সাঁকো দিতে হবে। উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি তারা ব্যবস্থা নেবেন।এ  ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo