সামান্য বৃষ্টিতে হাটুপানি কাঁদায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের মোহর ঘুলা পুকুর থেকে লোসরামপুর ভেতর দিয়ে যাওয়া একমাত্র কাঁচা মাটির রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে এমন দুরবস্থার মধ্যেই দিন কাটছে এলাকাবাসীর। বর্ষা এলেই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অথচ এখনও এ রাস্তাটি পাকা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের নজরেও পড়েনি গ্রামের হাজারও মানুষের এই কষ্ট। প্রাচীন এই গ্রামে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি ফুটবল মাঠ। এছাড়াও গ্রামটি তানোরের ঐতিহ্যবাহী হাটের সংযোগস্থল—যেখানে সপ্তাহে দু’দিন (শুক্রবার ও মঙ্গলবার) আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের হাজারও মানুষ কেনাবেচায় অংশ নিতে আসে। কিন্তু বেহাল রাস্তার কারণে বর্ষাকালে কাদা-পানির বিভীষিকায় ভোগে সবাই। অনেক সময় হাঁটু সমান কাদায় পা ডুবিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, শুকনো মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বর্ষাকালে রাস্তার গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন আর বোঝার উপায় থাকে না সেটি রাস্তা নাকি ফসলের জমি! যান চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় অটো কিংবা ভ্যানচালকরা এই রাস্তায় যেতে চায় না। স্থানীয়দের এখনো গরুর গাড়িই ভরসা, কিন্তু বর্তমান যুগে সে ব্যবস্থাও প্রায় বিলুপ্ত। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল পরিবহনে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন এবং কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন।
ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা আরও করুণ। অনেক সময় গর্তের পানিতে পড়ে গিয়ে তাদের বই-খাতা ভিজে যাচ্ছে। জরুরি সময়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ কোনো যানবাহন গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না, যা প্রাণহানির ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। এক অভিভাবক বলেন, “আমার সন্তানেরা এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে যায়। বর্ষাকালে তাদের শরীর থেকে খাতা সব ভিজে যায়। কবে এই কষ্ট শেষ হবে, জানি না।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন ও তুষার আহমেদ বলেন, “আমাদের জন্মের আগে থেকেই এই কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদা হয়। কৃষি ফসল ঘরে তুলতে ও বাজারে নিতে আমাদের এই রাস্তার ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ আজও রাস্তার উন্নয়ন হয়নি।
একইভাবে স্থানীয় শিক্ষক রমজান আলী বলেন, প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। রাস্তাটি পাঁকাকরণ এখন সময়ের দাবি। বৃষ্টির সময় তো পা ফেলাই যায় না। এ প্রসঙ্গে তালন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবু বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েকটি রাস্তা সংস্কার করেছি। পর্যায়ক্রমে মাটির রাস্তাগুলো পাঁকাকরণের উদ্যোগ নিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিষয়টি জানানো
হয়েছে । তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সঠিকভাবে আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও এই গ্রামের প্রাচীন কাঁচা রাস্তাটি এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া পায়নি। ভোটের সময় আশ্বাস মিললেও নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধিদের আর দেখা মেলে না—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দ্রুত পাঁকাকরণ ও উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর পড়লে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা করছেন সকলে।